অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহালের দাবি এবং আপিল বিভাগ রায় ঘোষণা করার সাতদিনের মধ্যে কার্যকর না করলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি হলে এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সেনা সদস্যদের সংগঠনটির নেতারা এই দাবি জানান।
মেজর সিনহা হত্যা মামলার বিচারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সংগঠনের সদস্য সচিব অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট সাইফুল্লাহ খান সাইফ। তিনি বলেন, “আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে জনগণের পালস বুঝতে হবে। কিছুদিন আগে ওসি প্রদীপের স্ত্রীকে জামিনে মুক্তি দিলেন আবার জনরোষে সেই জামিন বাতিল করলেন। তিনি যেন পতিত স্বৈরাচার সরকারের মতো আচরণ না করেন।”
মেজর সিনহা ও বিজিবি হত্যার বিচার না হলে বিচার বিভাগের ওপর মানুষের আস্থা থাকবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আছিয়া, তনু হত্যাসহ অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের বিচার জনগণ চাপ না দিলে কেন হয় না? আগে হলে বলা যেত দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে এগুলো হচ্ছে না। এখন কেন হচ্ছে না তা প্রধান উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টা জানেন।”
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, “জুডিশিয়ারি, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতি স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, রায় কার্যকরের ক্ষেত্রে কোনো হুমকি, প্রলোভন বা রাজনৈতিক চাপ যেন আপনাদের প্রভাবিত করতে না পারে।”
অন্তবর্তীকালীন সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “রায় ঘোষণার পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তা কার্যকর করতে হবে। অন্যথায় এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন সাবেক সহকর্মী হত্যার রায় কার্যকর করার দাবিতে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।”
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে মেজর সিনহা পুলিশের গুলিতে নিহত হন।
হত্যাকাণ্ডের চারদিন পর নিহতের বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। র্যাব তদন্ত শেষে প্রদীপ কুমারসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড ছাড়াও স্থানীয়ভাবে অভিযোগ রয়েছে প্রদীপ কুমার ক্ষমতার অপব্যবহার করে টেকনাফে ভয়-ভীতির রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। তিনি তথাকথিত ‘ক্রসফায়ারে’ অন্তত ১৪৫ জনকে হত্যা করেছেন।
ক্রসফায়ার বাণিজ্যের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগ ওঠে প্রদীপের বিরুদ্ধে। ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে কর্মরত অবস্থায় এক নারীর জমি দখলের চেষ্টা করায় তিনি বরখাস্ত হয়েছিলেন।
প্রায় ১৮ মাসব্যাপী বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ওসি প্রদীপ কুমার ও টেকনাফের বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ মো. লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন এবং সাতজনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
মাত্র ৩৩ কার্যদিবসে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হওয়ায় বাংলাদেশের আইন ও বিচারপ্রাপ্তির ইতিহাসে এটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
বর্তমানে এই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি হাইকোর্টের বিচারপতি মুস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে চলমান রয়েছে।
এই মামলার বিষয়ে প্রধান বিচারপতির অগ্রাধিকারভিত্তিক নির্দেশনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সাইফুল্লাহ খান বলেন, “আশা করছি চলমান শুনানি আগামী সপ্তাহেই শেষ হবে এবং উচ্চ আদালত প্রদীপ কুমার ও লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখবে।”
অন্তবর্তীকালীন সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “রায় ঘোষণার পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তা কার্যকর করতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মেহেদী হাসান বলেন, “কিছু সুশীল ব্যক্তি জনগণ ও সেনাবাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে। সেনাবাহিনী যদি এখন ব্যারাকে ফিরে যায় তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে। সশস্ত্রবাহিনীর কাজ সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাখাওয়াত, সদস্য সৈনিক নাইমুল হাসান।
মন্তব্য করুন