রাজধানীর মুগদার মানিকনগর এলাকায় পঞ্চাশ বছরেরও সময় বসবাস করছেন রহমত উল্লাহ। চোখের সামনে মান্ডা খাল দখল হতে হতে সংকুচিত হতে দেখেছেন তিনি।
খালটি আগে ছিল এই এলাকার মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম। পরে ময়লা আবর্জনা ফেলে খালটি ভরাট করা হয়েছে। এক সময়ের আর্শিবাদ খালটি এখন এলাকাবাসীর জন্য অভিশাপ।
মান্ডা, শ্যামপুর ও কালুনগর খাল পুনরুদ্ধার ও স্থাপনা নির্মাণে ২০২০ সালে ৮৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়। জলাবদ্ধতা নিরসন এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলেও অসংখ্য সেতু, ফুডকোর্ট, টয়লেট, বৈদ্যুতিক খুটি স্থাপনও এতে অর্ন্তূভক্ত করা হয়েছিল। এর অনেক কিছুই অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় প্রকল্পটি আবার পুনর্মূল্যায়ন করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন, খালের ময়লার গন্ধে বসবাস করা দূরুহ হয়ে ওঠেছে। পাশাপাশি মশার যন্ত্রণায় আরও অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছেন তারা। মশার জন্য কোনো ওষুধ দেয়া হয় না।
ডিএসসিসি’র প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেছেন, এটি ৯০০ কোটি টাকার প্রকল্প ছিল। পুনর্মূল্যায়নের পর ৩০ শতাংশ খরচ কমে যাবে বলে আশা করছি। এক্ষেত্রে প্রকল্পের কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হবে তা বিবেচনায় রাখা হবে। অন্য খালি জায়গায় সেগুলো স্থানান্তর করা হবে। এই প্রকল্পের কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বাদ দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
আগের প্রকল্পে পানি আইন অনুযায়ী খাল উদ্ধারের সিদ্ধান্ত ছিল। তাতে পাড় থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত দখল উচ্ছেদ হতো। পুনর্মূল্যায়নে সেটি বদলে সিএস আইন অনুযায়ী উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মো. শাহজাহান মিয়া আরও বলেন, বহুতল ভবন মালিকদের পুনর্বাসন করা সম্ভব নয়। তাই পানি আইন থেকে আমাদের সরে আসতে হয়েছে। সিএস রেকর্ড অনুযায়ী খালগুলোর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ঠিক রয়েছে।
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বললেন, এক্ষেত্রে পুরো বিষয়টি সিএস রেকর্ড অনুযায়ী করতে হবে। অবৈধভাবে বহুতল ভবন যারা নির্মাণ করেছেন, তাদের ছাড় দেয়া যাবে না। রাষ্ট্র যদি দখলদারদের দাবি মেনে নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। তাহলে মানুষ খাল দখল করে ধরেই নেবে যে এটি আর উদ্ধার করতে পারবে না।
যত্রতত্র অবকাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাদ দিয়ে খাল পুনুরুদ্ধারে মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেছেন, খালের মধ্যে কেন বাণিজ্যিক ফুডকোর্ট বানাতে হবে। একটি বা দুইটি ফুডকোর্টের প্রয়োজন থাকতে হবে। তবে বেশিরভাগই অপ্রয়োজনীয়। এর পেছনে রয়েছে টাকা আত্মসাতের মতো বিষয়। এ সময় প্রকল্প থেকে অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো বাদ দেয়ার পরামর্শও দেন তিনি।
প্রকল্পের অযুহাতে স্বাভাবিক পরিস্কার কার্যক্রম না করায় খালগুলোর বিভিন্ন স্থানে আর্বজনা জমে ভরাট হয়ে গেছে।
মন্তব্য করুন