কক্সবাজারে সংরক্ষিত বনে ৫ বালু মহাল ইজারা না দিতে দুই সচিব, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ ১৩ সরকারি কর্মকর্তাকে আইনী নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস)
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) ডাকযোগে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্টদের কাছে।
নোটিশে চকোরিয়া উপজেলাস্থ খুটাখালি ১, রামু উপজেলাস্থ ধলিরছড়া ও পানিরছড়া এবং উখিয়া উপজেলাস্থ পালংখালী ও হিজলিয়া বালুমহালগুলো বিলুপ্ত ঘোষণাপূর্বক ইজারা বহির্ভূত রাখতে বলা হয়েছে। একইসাথে উল্লেখিত বালুমহালগুলো ইজারাযোগ্য বালুমহালের তালিকা বহির্ভূক্ত না করা পর্যন্ত ইজারা বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিতের অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেইসাথে খুটাখালী খালের সীমানা নির্ধারণপূর্বক খালটি রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ ৭ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে নোটিশে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস হাসানুল বান্না।
যাদেরকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধান বন সংরক্ষক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা, কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা, চকোরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
নোটিশে বলা হয়েছে, ১৪৩২ বাংলা সনে ইজারা প্রদানের লক্ষ্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ইজারাযোগ্য ২৭টি বালুমহালের তালিকা প্রস্তুতপূর্বক গত ১১ মার্চ ইজারা বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। ইজারাযোগ্য ২৭টি বালুমহালের মধ্যে চকোরিয়া উপজেলাস্থ খুটাখালি ১, রামু উপজেলাস্থ ধলিরছড়া ও পানিরছড়া বালুমহাল, উখিয়া উপজেলাস্থ পালংখালী ও হিজলিয়া অন্যতম।
বেলা ও ইয়েস এর পক্ষ থেকে দেওয়া আইনী নোটিশে বলা হয়েছে, চকরিয়া উপজেলাধীন খুটাখালী-১ বালুমহাল মূলত একটি খাল যা স্থানীয়ভাবে খুটাখালী খাল নামে পরিচিত। এটি সংরক্ষিত বন ভুমির পাশে অবস্থিত। এ বনাঞ্চল বিপন্ন এশিয়ান বন্যহাতীর বিচরণ ক্ষেত্র। বানর, হনুমান, বন মোরগ, শুকর, সজারু, হরিণ, শিয়াল, বনবিড়ালসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে এ বনে। ইতোপূর্বে এ বালুমহাল ইজারা প্রদানের ফলে সংরক্ষিত বনভূমির পাহাড় ধ্বসে সংরক্ষিত বন ও বন বাগানের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হওয়ায় ও খালের গতিপথ পরিবর্তিত হওয়ায় বিগত ১৪২৯, ১৪৩০ ও ১৪৩১ বঙ্গাব্দে ইজারা প্রদান করা হয়নি।
একইভাবে রামু উপজেলাস্থ ধলিরছড়া, পানিরছড়া বালুমহাল, উখিয়া উপজেলার পালংখালী ও হিজলিয়া
বালু মহালগুলোও বনভূমির ১০০ফুট দুরত্বের মধ্যে অবস্থিত। ইতোমধ্যে বনভূমি, বণ্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের আশংকায় উল্লেখিত বালুমহালের ইজারা পরিহারের অনুরোধ জানিয়ে বন বিভাগের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা আবাসিক এলাকার ১ কিলোমিটার সীমানার মধ্যে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বালুমহাল চিহ্নিত ও ঘোষণাকরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার রাজস্ব অফিসার কর্তৃক পরিদর্শন করে ট্রেসম্যাপ ও তফসিলসহ স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদন গ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং পরিবেশ, পাহাড় ধ্বস, ভূমি ধ্বস বা খালের গতিপথ পরিবর্তন হবে কিনা সেবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতামত গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। বালু উত্তোলন করার ফলে পরিবেশ, প্রতিবেশ বা জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হবার আশংকা থাকিলে বালুমহাল বিলুপ্ত ঘোষণা করার বিধান রয়েছে।
বালু উত্তোলনের নেতিবাচক প্রভাবে ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানের পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে পড়েছে বিধায় বালুমহাল ঘোষণা ও ইজারা প্রদানের পূর্বে আইনী বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালন ও প্রয়োগ করা নোটিশ প্রাপ্তদের দায়িত্ব যা পালনে তারা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।
মন্তব্য করুন