নিউজ ডেস্ক
১৬ মার্চ ২০২৫, ৭:২৪ অপরাহ্ন
অনলাইন সংস্করণ

বাস্তবতায় মানবতা”

তিষ্যানন্দ ভিক্ষু

অধ্যক্ষ- আধুনগর জ্ঞান বিকাশ বিহার।

“মানুষের তরে মানুষের প্রাণ কাঁদে না আজ আর, মানুষের বুকে মানুষেই হানে শানিত হাতিয়ার” লক্ষণ ভান্ডারী’ এভাবেই ভেবেছেন তাঁর কবিতায়। এটা আসলেই চরম বাস্তবতা। সময় আমাদের অনেক কিছুই দেখিয়েছে, শিখিয়েছে। জীবন আর জীবিকা যেমন একই সূত্রে গাথা ঠিক তার সাথে মানবতা ও মনুষ্যত্ব কিংবা নৈতিকতা না থাকলে পরিপূর্ণ শুদ্ধ মানুষ কখনো হতে পারে না। সমাজের কিছু মানুষ বড়ই নির্মম। সর্বদা থাকে সুযোগের অপেক্ষায়। মানবতার চর্চা ভুলে গিয়ে ক্ষমতার দাপট এবং লোভের বশবর্তী হয়ে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য কিছু মানুষ প্রতিনিয়ত চেষ্টায় লিপ্ত। কাকে কিভাবে ঠকাবে, কিভাবে কৃত্রিম সংকটের অযুহাত দেখিয়ে অতি মুনাফা করবে, কিভাবে কারো দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তার সর্বস্ব লুটিয়ে নিবে, কে কার অধিকার হরণ করবে সে চিন্তা চেতনায় রয়েছে। বাল্যকালের শিক্ষাগুলো বাস্তবতার সাথে কেমন যেনো বড়ই অমিল।
ভুলতে বসেছি নিজের দায়িত্ববোধ। সামর্থ থাকার পরও অনেকের বিবেকহীন কাজগুলো দেখতে দেখতে দিনের পর দিন মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছি। সবাই কিন্তু এক রকম নয়,গুটি কয়েক মানুষের কারণে মানবতা আজ কাঁদছে। আমাদের শত অর্জন ম্লান হতে বসেছে। এভাবেই চলতে থাকুক এটা কারো কাম্য নয়। আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে।
তাই প্রত্যাশা মানুষের বিবেক জাগ্রত হোক।
মানুষের মাঝে ফিরে আসুক মনুষ্যত্ব, জয় হোক মানবতার।

মানবতা হোক মানুষের জন্যঃ-
মানবতা তখনই সর্বোৎকৃষ্ট পর্যায়ে অবস্থান করে যখন তা পরিপূণর্ভাবে যথার্থ স্থানে প্রয়োগ করা যায়। অন্যথায় মানবতা কথাটির প্রকৃত কোনো অর্থ প্রকাশ পায় না। সবার অন্তরে যেমন মানবতা বিরাজমান থাকে না তেমনই সব ক্ষেত্রে মানবতার জাগ্রত বহিঃপ্রকাশ ঘটানো ঠিক নয়। মানুষ থেকে মানবতার সৃষ্টি আবার মানুষ দ্বারাই সেই মানবতার ধ্বংস করা হয়। সর্ব অবস্থায় একজন মানুষ অন্য একজন মানুষের সব চাইতে দুর্বল দিকটি খুঁজে আর সময় সুযোগ বুঝে চরমভাবে আঘাত করে। তখন মানুষের গায়ে শত জোর থাকলেও মানুষ ও মানবতা হিংস্র রূপ ধারণ করে। চলমান সমাজে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানবতার দোহাই দিয়ে চলে হাজারো নৈতিকতাবিরোধী কর্ম কান্ড।
মানবতা শব্দের সঙ্গে গভীরভাবে যে শব্দটি জড়িয়ে আছে তা হচ্ছে নিঃস্বার্থতা। কারণ কোনো ব্যক্তি যখন মানুষের কল্যাণে কাজ করে তখন তা থাকে সম্পূর্ণ স্বার্থের বাইরে। কিন্তু বতর্মানে একেবারে স্বার্থের বাইরে মানুষ কাজ করে তা স্থিরভাবে বলা কিছুটা বোকামির পরিচয় দেয়া হবে। তাতে প্রত্যেক্ষভাবে নিজস্ব কোনো স্বার্থ না থাকলেও পরোক্ষভাবে রয়েছে নানান ধরনের স্বার্থ। বতর্মানে আমাদের দেশে মানবকল্যাণ, মানবসেবা, মানবাধিকার নামে যে সংগঠন,সংস্থা গুলো ভাসমান তারা কি তাদের নির্ধারিত নীতি অনুযায়ী কাজ করে নাকি অন্য পথে হাটে তা ভাবার বিষয়। শহরে-বন্দরে, গ্রামে-গঞ্জে কোথায়ও বাদ নেই মানবতাপ্রেমী ব্যক্তির উপস্থিতি। শুধু মুখে মুখে তারা মানবতা প্রেমী নাকি কর্মে তার পরিচয় মিলে তা চিন্তার বিষয়। শহর থেকে গ্রামে যেখানেই দৃষ্টি ফেলি না কেন, মানবকল্যাণ নামে যে দিকটি আমাদের চোখের সামনে ভাসে তা হচ্ছে, নিজের বা প্রতিষ্ঠানের প্রচার প্রসারের মাধ্যমে সবার দৃষ্টি আকষর্ণ করা। আমার দৃষ্টিতে বড় বড় সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, লিফলেট, ব্যানার টাঙ্গিয়ে মিডিয়া ডেকে মানুষকে সাহায্য করার নাম কোনোভাবেই মানবতা হতে পারে না।
মানুষ আজ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী নয় মাস যুদ্ধ করেছিল অধিকার আদায়ের জন্য,তখন তা সম্ভব হলেও আজ তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সবাই বঞ্চিত নয় ক্ষমতা ও অর্থের জোরে অনেকেই কিনে নিয়েছে তাদের নিজস্ব অধিকার। যাদের ক্ষমতার কাছে বিক্রি হচ্ছে আইন ও মানবতা। চোখের সামনে যে মানবাধিকার সংস্থাগুলো ঘুরে বেড়ায় তার অধিকাংশই অচল বলা যায়। মানুষকে অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে দেখেও তারা একদম নীরব। সরকারি লাইসেন্স ও নিবন্ধন ব্যাতিত অনেক মানবাধিকার সংস্থা দেশের বিভিন্ন স্থানে কমিটি গঠন করে নির্বিঘ্নে চালাচ্ছে তাদের খুশিমতো কার্যক্রম। দেশ ও বিদেশ থেকে আসা অর্থ ও সাহায্য কতটা দরিদ্র মানুষের নিকট পৌঁছাচ্ছে, নাকি আগেই ভোগ হয়ে যাচ্ছে, তা তারা ব্যতিত অন্য কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারবে না। ২০২১ সালের দিকে গিয়েছিলাম এক অনুষ্ঠানে, করোনার জন্য সরকার নির্দেশ দিয়েছেন কমপক্ষে ৩ফুট দুরত্ব রেখে বসার এবং চলা ফেরা করার জন্য। তাদের দেখে মনে হচ্ছে না যে দেশে করোনা ভাইরাস বলে ভয়ানক কিছু আছে। জিজ্ঞেস করতে বাধ্য হলাম, বললাম উপাসক আপনারা সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী ৩ফুট দূরত্ব রেখে বসুন, এতে আপনিও বাজবেন, পরিবেশও রক্ষা পাবে। উপাসক উত্তরে বললেন ভান্তে বন্দনা নিবেন, সরকার নির্ধারন করেছে ৩ ফুট তা সত্য বটে কিন্তু জনগনের কাছে আসতে আসতে তা ১ ফুট হয়ে গেছে। সরকার বরাদ্ধ দিচ্ছে ১০ টাকা, জনগন পাচ্ছে ১ টাকা।কিছু কিছু মানুষ সমাজে নিজের প্রভাব বিস্তার করার জন্য উজ্জ্বল আলোর ঝলকানিটুকু নিভিয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার পরিবেশ তৈরি করে নিজে দূরে অবস্থান করে তার স্বাদ উপভোগ করে। সমাজকে অযথা দোষারোপ করে লাভ কি..?

এসব সমস্যা হতে মুক্তি পেতে সকল কে শুদ্ধ মানবতার চর্চা করতে হবে। আমাদের সকল কে মানবিক হতে হবে,কারণ আমরা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ।
নিজের সুপ্ত মানবিকতাকে জাগ্রত করে দেশ ও দশের কল্যাণ সাধন করুন।
সকলে সুখী হোন।

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বাস্তবতায় মানবতা”

আবরার হত্যা: ২০ জনের ফাঁসি, ৫ জনের যাবজ্জীবন বহাল

আবরার হত্যা মামলা: আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন ও আপিলের রায় ঘোষণা চলছে

ঈদগাঁও বাজারের ইজারাদার রমজান কোম্পানির বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদ

অ্যাপের মাধ্যমে আসা নারী নির্যাতনের অভিযোগ এফআইআর হিসেবে গণ্য হবে

চায়ের দোকানে শেখ হাসিনার দেশে ফেরা নিয়ে বিতর্ক, বিএনপি কর্মী গুলিবিদ্ধ

মিয়ানমার শান্ত হলে রোহিঙ্গারা ফিরতে পারবেন: জাতিসংঘ মহাসচিব

এক লাখ রোহিঙ্গা ইফতারের অপেক্ষায়;কক্সবাজারে পৌঁছেছেন ডঃ ইউনুস ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস

বিএনপি ক্ষমতায় এলে পলাতক সব নেতাদের ফিরিয়ে আনা হবে

বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের মন্তব্য সার্বভৌমত্বে আঘাতের শামিল:পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

১০

হরেদরে সবাইকে শাহবাগী বলা বন্ধ করতে হবে: মাহফুজ আলম

১১

৩ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক

১২

৫৩ বছর পর আলোচনায় গণপরিষদ নির্বাচন

১৩

ধর্ষণের মনস্তাত্ত্বিক কারণ এবং প্রতিরোধ

১৪

শেখ পরিবারের নামে থাকা সেনাবাহিনীর ১৬ স্থাপনার নাম পরিবর্তনের প্রজ্ঞাপন

১৫

দেশে এখন যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে: উপদেষ্টা মাহফুজ

১৬

ঐকমত্য পোষণ করুন,আমরাই নির্বাচন করে দিতে সহায়তা করবো: নাহিদ ইসলাম

১৭

আটক ১৭ গরু নিলামে না তুলতে রামু বিজিবিকে আদালতের নির্দেশ

১৮

টেকনাফে বিশেষ টহল ও চেক পোস্ট অভিযান পরিচালনাকালে মাদক ক্রয়ের ৭,৬৮,০০০ টাকা, তিনটি মোবাইল ফোন ও একটি মোটর সাইকেলসহ দুই মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১৫

১৯

প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব শুক্রবার কক্সবাজার আসছেন

২০